-এ রোগ সাধারণত কুশি গজানোর শেষ অবস্থায় মাঠে দেখা যায়।
-রোগের জীবাণু মাটিতেই বাস করে। সেচের পানি দ্বারা রোগের জীবাণু কান্ডে আক্রমণ করে।
-প্রথমে কুশির বহিঃ খোলে ছোট আয়তকার কালো কালো দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ ভিতরের খোলে ও কান্ডে প্রবেশ করে। কান্ড পচিয়ে দেয় বলে গাছ ঢলে পড়ে ফলে ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
-রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে পরে আবার পানি দেয়া।
-জমিতে ইউরিয়া কম ও বেশী পটাশ সার ব্যবহার করা।
-জমির নাড়া ও খড় ধান কাটার পর জমিতে পুড়ে ফেলা।
-প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক কুপ্রাভিট (০.৪%), কমপ্যানিয়ন (০.২%) ব্যবহার করা।
এ রোগ চারায় এবং বয়স্ক গাছে দু’ধরণের লক্ষণ সৃষ্টি হয়।
চারা অবস্থায় একে নেতিয়ে পড়া বা চারা পচা (ক্রিসেক) বলে এবং বয়স্ক অবস্থায় একে পাতাপোড়া রোগ বলে। চারার বাইরের পাতা হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে খড়ের রঙে পরিণত হয় ফলে নতুন পাতা ও তেমনি ভাবে শুকিয়ে যায় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। চারার গোড়ায় হাত দ্বারা চাপ দিলে পুঁজের মত দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ বের হয়।
বয়স্ক গাছে প্রথমে পাতার কিনারায় এবং আগায় ছোট ছোট জলছাপের মতো দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে পাতার দু’প্রান্ত দিয়ে নিচের বা ভিতরের দিকে অগ্রসর হয় আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হতে থাকে ও ধূসর বাদামী বর্ণে পরিণত হয় যা ঝলসানো বা পাতা পোড়া বলে মনে হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
চারা উঠানোর সময ক্ষত না হওয়া।
আক্রমণ প্রবণ জাত চাষ না করা।
ইউরিয়া সার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা।
সব ইউরিয়া চারা বা কুশি অবস্থায় না দিয়ে ২/৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করা।
রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার পানি দেয়।
চারা অবস্থায় রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত চারা তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
ধান কাটার পর জমিতে নাড়া ও কড় পুড়ে ফেলাপ।
আক্রান্ত জমিতে ৫০-১০০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকালে স্প্রে করা।
পটাশ সার বিঘাপ্রতি ৫/৬ কেজি উপরি প্রয়োগ করা।
কুশিকারৈ ঝড়ের পর পরই ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা।
কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। প্রয়োজনে ১% বর্দোমিকচার ব্যবহার করা যেতে পারে।
আক্রান্ত পাতায় লম্বালম্বি শিরা বরাবর হালকা সবুজ বা হালকা হলুদ রঙের রেখা দেখা যায়।
ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ পাতা হলুদ বর্ণের খাটো গাছ দেখা যায়।
জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে কমলা-হলুদ বা হলুদ বর্ণের খাটো গাছ দেখা যায়।
ক্ষেতে বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং এর উপস্থিতি দেখা যায়।
আক্রান্ত গাছের শিকড় দূর্বল হয় এবং গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ধানের জাত ব্যবহার করা যথাঃ বিআর- ১০,১১,১৪,১৬,২০,২২ এবং ব্রিধান- ২৪,৩৬,৩৭,৩৯,৪১।
রোগক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা শিকড় সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
ক্ষেতের আশেপাশে আড়ালী ঘাস ও অন্যান্য আগাছা পরিস্কার করা।
বীজতলায় বা জমিতে হাতজালের প্রতি একশ টানে ৪০-৫০ টা সবুজ পাতা ফড়িং পাওয়া গেলে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন – ডায়াজিনন ২ মিলি, সুমিথিয়ন-২ মিলি ডাইমেথোয়েট (রগর) ২ মিলি, ম্যালাথিয়ন- ২ মিলি মেটাসিস্টক্স-২ ব্যবহার করা।
এ কৃমি ধান গাছের আগার কচি অংশের রস শুষে খায়, ফলে প্রথম পাতার গোড়ায় অর্থ্যাাৎ পাতা ও খোলের সংযোগ স্থলে সাদা ছিাটা ফোটা দাগের ন্যায় দেখা যায়। সাদা দাগ ক্রমেই বাদামী রঙের হয় এবং পরে দাগগুলি বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটা শুকিয়ে ফেলে। ফলে অনেক সময় থোড় বা ছড়া বের হতে পারে না অথবা ছড়া ভিতরে কুচকানা বা মোছড়ানো অবস্থায় থাকে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
ফসল কাটার পর আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়ে নষ্ট করা।
ধান ছাড়া ঐ জমিতে অন্যান্য ফসলের চাষ করা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
আক্রান্ত ক্ষেতের পানি অন্য ক্ষেতে না দেওয়া।
যেখানে সম্ভব বৎসরের প্রথম বৃষ্টির পর জমি চাষ দিয়ে ১৫-২০ দিন ফেলে রাখা (মাটি শুকালে কৃমি মারা যায়)
ফুরাডান ৩ জি নামক দানাদার বালাইনাশক বিঘা প্রতি ৪.৫ কেজি চাষের সময় ব্যবহার করা।